স্ট্রোকে মুখ বাঁকা হয়ে যাওয়া রোগির সুস্থ হয়ে ওঠার গল্প

প্রিয় আতাউর ভাই, একটি এনজিও তে চাকরি করেন। এর আগে তিনি আমাদের কাছে এসেছিলেন বেশ কয়েকজন রোগির সমস্যা নিয়ে। অথচ এবার উনাকে আসতে হলো নিজের সমস্যা নিয়ে।

কিছুদিন আগে তিনি মিনি স্ট্রোক করেন এবং এর ফলে উনার অন্যান্য Motor ফাংশন ঠিক থাকলেও উনার মুখের একপাশে অবশ ও কথা বলতে অস্পষ্টতাবোধ করেন। আমাদের কাছে আসার পর Saiful Islam স্যার এর এসেসমেন্ট ও ট্রিটমেন্ট প্লান এর পর উনার সুস্থতার জন্য শুরু হয় কিছু স্মৃতিময় যাত্রা।

আতাউর ভাই আমার দেখা অন্যতম পজেটিভ একজন মানুষ। সংসারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যাক্তি। আমাদের কাছে আসার শুরুর দিকে তিনি ইমোশনালি কিছুটা ইমব্যালেন্সড ছিলেন, উনার পরিবারের সবাই খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। উনার চিকিৎসার সময়ে আমি যতটুকু না চিকিৎসা দিয়েছি, তার চেয়ে বেশি চেস্টা করেছি মানসিক সাপোর্ট ও কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে।

আমি উনাকে বারবার বলতাম, আতাউর ভাই! আপনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করেন, আপনাকে আল্লাহ নতুন জীবন দান করেছেন৷ এর চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারতো, আল্লাহ আপনাকে পরীক্ষা করেছেন। আপনার কিছু হয়ে গেলে পরিবারের কি হবে? স্ট্রোক করে অন্য সবাই পঙ্গু হয়ে থাকতে হয়, আপনার তো শুধু মুখে হালকা সমস্যা হয়েছে। এটা খুব দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ! আর সামনের দিকে অনেক সতর্ক থাকতে হবে।

উনাকে যদিও আমি খুব ভরসা দিয়ে ট্রিটমেন্ট করতাম, তবুও আমি নিজেকে নিজে মোটিভেট করতে পারতাম না, কারণ আমি নিজেও জানতাম না আসলে কতদিনে এ সমস্যা ঠিক হবে। কারণ নিউরোলজিকাল যে কোন সমস্যাকে আন্দাজ করে বলা মুশকিল যে সামনের দিকে কি ঘটবে। কারণ আমার প্র্যাকটিস লাইফে আমি অনেক নিউরো সমস্যায় হোচট খেয়েছি। কিন্তু রোগিকে হতাশ করা তো আমার কাজ নয়।

আমি উনাকে Facial Palsy এর জন্য হালকা কিছু Active Assisted এক্সারসাইজ, PNF, Strenthening, TENS ইত্যাদির মাধ্যমে খুবই আলতোভাবে চিকিৎসা দিয়েছিলাম। Facial Muscle গুলো দেহের অন্যতম সেনসেটিভ জায়গা, এখানে জোরাজোরি করে তেমন কিছু করার নাই। তাই হালকা কিছু ট্রিটমেন্ট করে আমি উনাকে বাড়িতে কিছু কাজ দিলাম, লাইফস্টাইলে ডিসিপ্লিন আনতে বললাম। উনি আমাদের কথামতো চেস্টা করেছিলেন এবং ফিজিওথেরাপি এর ফলোয়াপ এ ছিলেন। আল্লাহর রহমতে কিছুদিন পর উনার উন্নতি অল্প অল্প করে শুরু হয়। উনার উন্নতি দেখে আমরা আরো বেশি আত্ববিশ্বাসী হয়ে চিকিৎসা করতে থাকি।

দীর্ঘ ৩মাস ফিজিওথেরাপি ফলোআপ শেষে সেদিন, আতাউর ভাইকে খুব আবেগ আপ্লুত হয়ে বললাম, ভাই আপনাকে তো আমি চাইলে এখন রিলিজ করে দিতে পারি (যদিও আমি এই প্রিয় মানুষটাকে এত সহজে ছাড়তে চাইনি)। ট্রিটমেন্ট শেষে আতাউর ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে ছলছল চোখে বললেন, ইমন ভাই আমি যতদিন বেঁচে থাকবো, আপনার কথাগুলো আমার মনে থাকবে। আমি আর শরীরের উপর অত্যাচার করবো না, শরীরের খেয়াল রাখবো। আপনার কথাগুলোতে আমি অনেক পরিবর্তন হয়েছি, ইনশাআল্লাহ আরো হবো!

মানুষটার কথা শুনে অন্তরটা শান্তিতে ভরে উঠলো। ভাইয়ের সাথে একটা ছবি তুলে স্মৃতির পাতায় রেখে দিলাম। সত্যি আতাউর ভাইকে খুব মিস করবো।

জীবনের প্রতিটা ক্ষণে বারবার স্মরণ করি, সুস্থতা আল্লাহর অনেক বড় নেয়ামত। যাদের আল্লাহ এই নেয়ামত দান করেছেন, বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করুন। আল্লাহ সত্যিই অসীম দয়ালু।

পৃথিবীর সকল প্রিয় মানুষগুলোকে আল্লাহ ভাল রাখুক।
আমিন।

– ইমন চৌধুরী
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার

Share This :

Leave a Reply